আলোর উৎসবে শক্তির আরাধনা: বাংলাদেশে কালী পূজা ও দীপাবলি উদযাপনের প্রস্তুতি
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব, শ্যামা পূজা (কালী পূজা) ও দীপাবলি দোরগোড়ায়। আলোর এই উৎসবকে ঘিরে সারা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। দুর্গাপূজার পর সবচেয়ে বড় এই আয়োজনকে সফল করতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যাপক প্রস্তুতি। কে এই মা কালী? হিন্দু শাস্ত্র মতে, মা কালী হলেন শক্তির দেবী। তিনি দশমহাবিদ্যার প্রথম ও প্রধান রূপ। মা কালী সময়, পরিবর্তন এবং ধ্বংসের দেবী হলেও ভক্তের কাছে তিনি পরম করুণাময়ী মাতৃস্বরূপা। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, অশুভ শক্তির বিনাশ করতেই তাঁর আর্বিভাব। তাঁর ভয়াল রূপ মূলত অশুভের বিনাশকারী এবং শুভ শক্তির প্রতীক। 'দক্ষিণাকালী' রূপেই তিনি সর্বাধিক পূজিত হন, যেখানে তিনি মহাদেব শিবের বক্ষে দণ্ডায়মান। পূজার তাৎপর্য ও প্রস্তুতি কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। গভীর রাতে পূজা অনুষ্ঠিত হয় বলে একে 'নিশি পূজা'-ও বলা হয়। বিশ্বাস করা হয়, ভক্তিভরে এই রাতে মায়ের আরাধনা করলে জীবনের সকল অন্ধকার, অশুভ শক্তি ও ভয় দূরীভূত হয় এবং ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এই উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধান মন্দিরগুলোতে চলছে বিশেষ আয়োজন। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালী মন্দির (ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহনকারী), সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির এবং শাঁখারীবাজারের মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা গড়ার কাজ প্রায় শেষ। মন্দিরের পাশাপাশি অনেক বাড়িতেও ঘট স্থাপন করে এই পূজা করা হয়। কেবল ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, বরিশাল, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে কালী পূজার আয়োজন করা হয়। মন্দির ও মণ্ডপগুলো সাজানো হচ্ছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। দীপাবলি: অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর জয় কালী পূজার এই অমাবস্যা তিথিটি 'দীপাবলি' উৎসব নামেও পরিচিত। এটি আলোর উৎসব। এই রাতে অশুভ শক্তিকে দূর করতে এবং শুভ ও পবিত্র শক্তিকে স্বাগত জানাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ গৃহে প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘর আলোকিত করেন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই আলোয় পূর্বপুরুষদের আত্মা পথ দেখে স্বর্গলোকে গমন করেন। উৎসবকে আরও আনন্দময় করতে ফোটানো হয় আতশবাজি ও পটকা। সব মিলিয়ে, কালী পূজা ও দীপাবলি কেবল একটি ধর্মীয় উপাসনা নয়, এটি অশুভকে বিনাশ করে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা এবং অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর বিজয়ের এক সার্বজনীন উৎসব, যা বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে।







