
পাকিস্তান-বাংলাদেশ থেকে আসা অমুসলিমদের শরণার্থী মর্যাদা
পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমের বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় সরকার। আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদন অনুসারে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে যে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ২০২৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে প্রবেশকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে। এর ফলে, বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও বা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ভারত সরকার তাঁদের দেশ থেকে বিতাড়ন করবে না। আনন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১ সেপ্টেম্বর জারি করা এই বিজ্ঞপ্তিটি ২০২৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল কার্যকর হওয়া অভিবাসন এবং বিদেশি আইনের (Foreigners Act) ৩৩ ধারা অনুযায়ী আনা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও, আইনের ৩৩ ধারা কেন্দ্রীয় সরকারকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিয়মে ছাড় দেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করে। সেই ক্ষমতার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা হিন্দু বাঙালিদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে এবং তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না। এই পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের হিন্দু জনগণের মধ্যে থাকা 'পুশব্যাক' আতঙ্ক দূর করার একটি প্রয়াস বলে মনে করা হচ্ছে। নাগরিকত্বের প্রথম ধাপ? এই বিজ্ঞপ্তির পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই শরণার্থীরা কি ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন? আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এটি নাগরিকত্ব পাওয়ার পথের প্রথম ধাপ হতে পারে। তবে এর জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ (CAA)-তে সামান্য সংশোধন প্রয়োজন হবে, যার জন্য সংসদে পৃথক বিজ্ঞপ্তি বা বিল আনতে হতে পারে। যদিও এই গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে সিএএ-এর কোনো উল্লেখ নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে। মূল লক্ষ্য কি অসম? আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে অসমের এক বিজেপি নেতার বক্তব্যকে 'তাৎপর্যপূর্ণ' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা এই পদক্ষেপকে "অসমের খেলা" বলে অভিহিত করে বলেছেন, "অসমের দিকে তাকিয়ে হিসাব কষেই যা করার করা হয়েছে।" তাঁর মতে, এই বিজ্ঞপ্তির মূল লক্ষ্য অসম হলেও পশ্চিমবঙ্গও এর দ্বারা প্রভাবিত হবে। অসমে ভোটার তালিকায় 'সন্দেহজনক' (Doubtful) হিসেবে চিহ্নিতদের অধিকাংশই হিন্দু বাঙালি এবং সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের মধ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল। সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর রাজ্য বিজেপির নেতারা, যেমন সুকান্ত মজুমদার এবং শান্তনু ঠাকুর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, "সিএএ, এনআরসি-কে এক করে বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে, কিন্তু সেই কৌশল সফল হবে না।"